আজিব ব্যাপার। একাধিক বিবাহ নিয়ে কোনো কথাই বলা যায় না। কী পরিমাণ ঘৃণ্য বানিয়ে রেখেছি একটা হালাল বিধানকে। বোনেরা চরম আক্রমণাত্মক হয়ে উঠছেন এই আলাপে। গালাগালি, পরিবার তুলে কথা বলতেও পিছপা হচ্ছেন না।

অবশ্য নারী-পুরুষ উভয়েই দায়ী। কারও দায় কম না। একদিকে যেমন ভালো উদাহরণের অভাব আছে, যা দেখে কেউ আগ্রহী হতে পারে। ইম্ম্যাচিউরড বেদীন পুরুষেরা একাধিক বিয়ে করে চরম জুলুম করে গেছে একটা সময়। ফলে মেয়েরা লিটারেলি ঘৃণা করে বিধানটাকে। শরীয়তে এই সুযোগটা না থাকলে তারা হাঁফ ছেড়ে বাঁচতো, যেমন ধনীরা বাঁচতো যাকাতটা না থাকলে।

আরেকদিকে উপনিবেশের প্রভাব আছে। বৃটিশরা উপনিবেশী লুটপাট জায়েজ করেছিল যে কথা বলে: ভারতীয়রা অসভ্য। এদের সভ্য করার মহান দায়িত্ব বৃটিশের (white man's burden)। মিশনারী, প্রাচ্যবিদ, নেটিভ দালালরা মিলে তৈরি করেছে 'কলোনিয়াল লিটারেচার', মানে কেন ভারতীয়রা অসভ্য, কোন কোন দিক থেকে তাদেরকে উন্নত সভ্য করতে হবে, কোন কোন কালচার জঙলি? তার মধ্যে অন্যতম হল: ভারতীয়রা নারীর প্রতি সভ্য আচরণ করতে পারে না। ইউরোপে নারীরা কত উন্নত জীবন যাপন করে। বিপরীতে ভারতীয়রা (হিন্দুরা) সতীদাহ করে, বিধবা-বিবাহ করে না, বিধবাদের উপর নানান জুলুম (মাংস খাবেনা, সাদা শাড়ি, সাজসজ্জা করবে না, চুল বড় রাখবে না) নারীকে সম্পত্তি দেয় না, নারীকে শিক্ষা দেয় না।

মুসলমানের ক্ষেত্রে এসব অভিযোগ দেয়া যেত না। কীভাবে মুসলমানদের সংস্কৃতিকে জঙলি প্রমাণ করা যায়? মুসলমানদের তো এসব অভিযোগ দেয়া যাচ্ছে না। (কলোনিয়াল স্লেভ বেগম রোকেয়ার বক্তব্য দিবেন না, সেটা আরেকটা বড় আলাপ)

মুসলমানদের ভিলেন বানানোর কায়দা হল:

  • মুসলমানরা একাধিক বিবাহ করে (সমতা বোঝে না)
  • মুসলমানরা বাল্য বিবাহ করে (কৃষিভিত্তিক সমাজে এর ভিন্ন কারণ আছে, সেটা লেজিট)

এক স্বামী, একাধিক স্ত্রী। পশ্চিমা সমতার চোখে মহা-অন্যায়, গর্হিত পাপ। যেখানে তাদের কাছে এতোটাই (স্বামী=স্ত্রী), যে স্বামীও বলা যায় না। বলতে হয় দাম্পত্যসঙ্গী বা পার্টনার। সেখানে এক স্বামী কাওয়াম আলাল ২/৩/৪ স্ত্রী, এটা তো সমতা আপ্তবাক্যের সাথে ব্লাসফেমি। আপনি যে পুরুষের একাধিক বিয়ের বিরোধী, সেটা এই সমতায় ভায়োলেশনের কারণে কিনা যাচাই করে দেখবেন নিজেকে।

উপনিবেশ নারী-পুরুষ উভয়ের ফিতরাত নষ্ট করে দিয়ে গেছে। উপনিবেশ পরবর্তী সময়েও মুসলমানের সমাজ-সংস্কৃতির প্রতি বিদ্বেষ ও পশ্চিমা সমাজ-সংস্কৃতির প্রতি মুগ্ধতা আরও বেড়েছে বই কমেনি। তারই অংশ হল একাধিক বিয়ের প্রতি বিদ্বেষ। ইতিহাসে এর প্রতি নারীদের ঈর্ষা ছিল, বিদ্বেষ ছিল না। ঈমানী গায়রত ছিল: আল্লাহ যা আমার স্বামীর জন্য হালাল করেছন, আমি তাকে হারামস্য ঘৃণা করার কে? এতটুকু ছিল। পুরুষও গায়রতমন্দ ছিল: আমার অধীনস্ত কারও উপর আমারই ভালোবাসার মানুষের উপর আমি জুলুম করি কীভাবে? সবই শেষ। পশ্চিমা মডার্নিস্ট স্কলাররা মাকাসেদ, মাসালাহাতের নামে একে 'হারাম' করার কথাও বলছেন। কী পরিমাণ স্পর্ধা হয়ে গেছে আমাদের।

পুরুষ ফিতরাতগতভাবে নানান রকম। কারও এক বিয়েতেই কাজ হয়ে যায়, আর লাগে না, ডিফল্ট ভালো মানুষ। কারও আরেকটু লাগে। তাহলে যার এক বিয়েতে প্রয়োজন মেটেনা, তার গুনাহ করা ছাড়া আর কোনো সুযোগই রইল না (হয় সেক্স ক্রয় করবে, নইলে পর্ন-হস্তচর্চা)। মনস্তাত্ত্বিক এই বৈচিত্র্যকে ইসলাম স্বীকার করে, আল্লাহর সে জন্য সুযোগ রেখেছেন। তবে এটা যেন লাগামছাড়া না হয় সেজন্য লাগাম দিয়েছেন: স্ত্রীদের মাঝে ইনসাফ। ব্যাপারটা সিলেক্টিভ, সবার জন্য না। আমি এটা জনে জনে করার মত কাজ মনে করি না। সামাজিক আন্দোলন বানানোরও কিছু নেই। যার সামর্থ্য আছে, প্রয়োজনও আছে, ইনসাফ নষ্ট হবার ভয় নেই… সে করবে। সে করলে আপনারা ট্রিগার্ড হন কেন? সে লাগলে ৪টাই করলো, তাতে সেক্যুলারদের সমস্যা হতে পারে, আমাদের সমস্যা কি?

তবে আমার মতে, সক্ষম সমর্থ ধনী সুবিবেচনাসম্পন্ন… ১ম স্ত্রীর উপর বিরক্ত নয়, বরং ১ম স্ত্রীকে জয় করেছে…ভালো উদাহরণ তৈরি করতে আগ্রহী… এমন পুরুষের ২য় বিয়ে নিয়ে ভাবা দরকার। ইসলামী সংস্কৃতির একটা অংশকে, হালাল একটা বিধানকে মুসলমান নারী-পুরুষরা এতোটা ঘৃণা করে, এটা নর্মাল না। এই কলোনিয়াল মাইন্ডসেট রিভার্স করতে কারও কারও এটা করা দরকার। এবং প্রকাশ্যে ২/৩ স্ত্রী নিয়ে জায়েজ সামাজিক পরিসরে (অফলাইনে, নট অনলাইন) আসা দরকার। দেখানো দরকার, এটা হল ইসলামী পরিবার। প্রথম জমানার পরিবার। এক স্বামী, একাধিক স্ত্রী, সকলের আদরে বড় হওয়া সন্তান। আমাদের সন্তান।

ব্যারিয়ার একটাই। ইনসাফ কায়েম। ইনসাফ কায়েম তো আপনি বুঝবেন না ২য় বিবাহ না করা পর্যন্ত। ১ম স্ত্রীকে যদি জয় করতে পারেন, তাহলে আপনি যোগ্য। ভালো উদাহরণ তৈরি করতে না পারলে প্লিজ এই কাজটা করিয়েন না। এমনিতেই কাজটা আমাদের বাপদাদারা পচিয়েছে, আপনি আর নতুন করে পচিয়েন না। বিশেষ করে পারিবারিক জীবন অনলাইনে আনা তো চূড়ান্ত শিশুতোষ কাজ। এধরনের হলে আপনি এগিয়েন না ভাই।

আমাদের অনেক ভালো উদাহরণ দরকার। স্বামীর হারাম মেনে নেবে, কিন্তু স্বামীর হালাল মেনে নেবে না। এটাকে মুসলিমরা এই পর্যায়ের ঘৃণা করে, এটা কোনোভাবেই বরদাশত করা যায় না। এজন্য যেসব ভাই-বোন কুরবানি করবে, আল্লাহর কাছে নিশ্চয়ই তাদের জন্য আজর আছে। সবাই কবুল হতে পারবে না।

সাম্প্রতিক ঘটনা দিয়ে একটা বিধানকে জাজ করা ঠিক হবে না। যাকাতের শাড়ি-লুঙ্গি নিতে গিয়ে পদদলিত হয়ে মারা গেল, এটা নিশ্চয় যাকাতের বিধানের দোষ না।