উপনিবেশ আমাদের জন্য একটা বাস্তবতা। আমাদের বহুকিছু যে উপনিবেশ আমল বদলে দিয়ে গেছে, এই বাস্তবতাটা আমাদের স্বীকার করতে হবে।
উপনিবেশের লক্ষ্য মৌলিকভাবে জুলুম ও সম্পদ শোষণ। যতটুকু উন্নয়ন মেট্রোপলিস (উপনিবেশী শক্তি) করে, তা এই লক্ষ্য অর্জনের জন্যই করে। রেললাইন তারা নেটিভদের সুবিধার জন্য করেনি, করেছিল নিজেদের সুবিধার্থে, কাঁচামাল-সৈন্য বহনের স্বার্থে।
উপনিবেশী লক্ষ্য অর্জন (সম্পদ শোষণ) ও তা চিরস্থায়ী করার জন্য তারা কিছু প্রতিষ্ঠান তৈরি করে। সেনাবাহিনী, আমলাতন্ত্র, এগুলোতে লোক সাপ্লাইয়ের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা ও বিশ্ববিদ্যালয়, পলিটিক্যাল পার্টি ইত্যাদি। যা দিয়ে তারা উপনিবেশকালেও লক্ষ্য অর্জন করেছে। আবার উপনিবেশ ছেড়ে যাবার পরও নব্য-উপনিবেশী লক্ষ্য অর্জন করে যাচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানগুলো দ্বারাই।
আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে কাঠামোগত ইসলামবিদ্বেষের ব্যাপারে আলাপ করছি। বিশ্ববিদ্যালয় একটি উপনিবেশী প্রতিষ্ঠান। যার লক্ষ্য কলোনিয়াল মাস্টারদের মতো মনন-রুচি সম্পন্ন নেটিভ তৈরি করা। যারা কলোনির আমলাতন্ত্র ও কলোনিয়াল লিটারেচার সামলাবে। কলোনিয়াল লিটারেচার হল নেটিভদের খুঁত-পশ্চাদপদতা, অসভ্যতা খুঁজে বের করা ও সাদাদের শাসনের বৈধতা তৈরি করা। এ ধরনের বুদ্ধিজীবী তৈরি করা। [কলোনিয়াল স্টাডিজ নামে বহু গবেষক এসব গবেষণা করেছে]
লর্ড মেকোলে নয়া শিক্ষাব্যবস্থার লক্ষ্য সম্পর্কে বলেছিল: তারা এর দ্বারা কিছু মধ্যস্থতাকারী তৈরি করতে চায়, যারা শাসক-শাসিতের মাঝে সেতু হবে। এবং ইউরোপীয় ধ্যানধারণা দিয়ে নিজস্ব ধ্যানধারণাকে বদলে দেবে। এজন্য এই শ্রেণীর গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে তাদের দেয়া হবে বিভিন্ন ডিগ্রি, পদবি ইত্যাদি। বিশ্ববিদ্যালয় মূলত এই কলোনিয়াল মনমগজযুক্ত হাউসনিগার তৈরির কারখানা, যারা স্বজাতির বিরুদ্ধে বলবে ও শাদাপ্রভুদের পক্ষে বলবে। এজন্যই যখন তারা দেখে এখানে দাড়িটুপি-বোরকার আধিক্য, তখন তারা পেরেশান হয়ে বটবৃক্ষের কাছে ক্ষমা চায়।
ফলে কাঠামোর ভিতরেই ইসলামবিদ্বেষ মৌলিক উপাদান হিসেবে রয়েছে। এজন্যই ইসলামের ইতিহাস সাবেজেক্টেও মূলপাঠ মুসলিম ইতিহাসবিদরা নন, বরং হিট্টি-ওয়াট-গিয়োম প্রমুখ। এ থেকেই বুঝা যায় এটা মূলত কলোনিয়াল প্রতিষ্ঠান। এখানে পা দেয়া মাদরাসার ছাত্রও কিছুটা না কিছুটা বদলে যায়। ডিফল্ট ইসলামবিরাগ ভার্সিটির মৌলিক বৈশিষ্ট্য।
আল্লাহ পরিকল্পনা করেন, তারাও করে। আল্লাহর পরিকল্পনাই বিজয়ী হয়। এখন ভার্সিটিতে ইসলাম নতুন প্রাসঙ্গিকতা পাচ্ছে। ফেরাউনের ঘরে মুসা লালিত পালিত হচ্ছে। এটা দেখে তারা আরও মেজাজ হারিয়ে ইসলামবিদ্বেষ উগড়ে দিচ্ছে।
এরা একেকটা ইসরায়েলের মিনিয়েচার। তোমাকে বেঁধে পেটাবো, তুমি আহা-উহু করলে তুমি জঙি। আহা-উহু করা যাবে না। তেমনি তোমার নবিকে নিয়ে আল্লাহকে নিয়ে 'চ' 'দ' দিয়ে গালিগালাজ করবো, নবিপত্নীদের নিয়ে অশ্লীল কথা বলব, কুরআন পাড়াবো-ছিঁড়বো। তোমার কলিজা কাটবো-ফাঁড়ব, তোমাকে খোঁচাবো, তোমার হৃদয়কে আগুনে পোড়াবো। তুমি জ্বলবা কিন্তু কিছু বলবা না। কিছু বললেই তুমি মব, তুমি উগ্রবাদী। এরা প্রতিটা ভার্সিটিকে একেকটা গাযা বানিয়ে রেখেছে। সেক্যুলার এপার্টহেইড।
রাষ্ট্রও কলোনিয়াল রাষ্ট্র। উপনিবেশের ধারাবাহিকতা, যেটা চালায় উপনিবেশী প্রতিষ্ঠানগুলোই। রাষ্ট্রও এদেরই পক্ষে। কাগজেকলমে ২ বছরের সাজা, তাও যেন না হয় এজন্য সব ব্যবস্থা করা আছে। নবি-আল্লাহ-কুরআন এদের কাছে কিছু ব্যাকডেটেড নেটিভ কালচারাল উপাদান। এই ইস্যুতে সংবেদনশীলতা নেটিভ পশ্চাদপদতা। আর নবি-আল্লাহ-কুরআনকে চ্যালেঞ্জ করা হল মেট্রোপলিসের এনলাইটেনমেন্ট।
করণীয় কি?
১.
ট্রেড ইউনিয়নের মতো মুসলিম ইউনিয়ন গঠন করা ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে। ভার্সিটির কলোনিয়াল ইসলামবিদ্বেষী কাঠামোকে ক্রমাগত চ্যালেঞ্জ করা। প্রশ্ন করা। প্রেসারে রাখা।
২.
জাতীয় পর্যায়ে প্রেসার গ্রুপগুলো ব্লাসফেমি আইনের জন্য মাঠে নামা
৩.
ভার্সিটির কারিকুলাম ঢেলে সাজানো। কলোনিয়াল পার্পাস থেকে একে বের করে আনা
৪.
ইউজিসিকে ধর্ম অবমাননা নীতিমালা করতে চাপ দেয়া
৫.
কীভাবে ভার্সিটিগুলো বিগত সরকারের আমলে সরস্বতী পূজা করেছে, কিন্তু ইসলামী সেমিনারের অনুমতি দেয় নি৷ সেগুলো ডকুমেন্টেড করে জনমত গঠন।
৬.
ইসলামি ক্লাব বা সেমিনার বা এজাতীয় কিছু করতে দিতে না চাইলে সেটা লিখিত নেয়া, ভিডিও নেয়া। জবাবদিহি চাওয়া।
বার বার ক্যাম্পাসগুলোতে এসব ঘটনায় দোষ একমাত্র রাষ্ট্র ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। তারা এধরনের অবমাননাকে প্রশ্রয় দিচ্ছে বার বার। রাষ্ট্র ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি তাদের অতীত ইসলামবিদ্বেষ ঝেড়ে ফেলে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা রাখতো, এধরনের উস্কানির ঘটনা ঘটতো না। রাষ্ট্র-প্রশাসন ছাড়া অন্য কাউকে যে দায়ী করবে, তাকেও চিনে রাখুন। সে এসব উস্কানিদাতার দোসর। বিনা বাধায় উস্কানি দেবার স্বাধীনতা চায় সে।
আসুন। হাত দিয়ে তো পারছি না। জবান দিয়ে প্রতিরোধ করুন আল্লাহ-রসুল-কুরআনের অবমাননা।