আমি বলতে চাই, গত ১৫ বছর আমাদের ভোগান্তির মূল কারণ ইতিহাসের আওয়ামী বয়ান। ৩টা ধাপে আওয়ামী শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা হয়েছে এবং তাতে হাওয়া দিয়েছে পানি দিয়েছে শাহবাগী রাম-বাম-শিল্পী গোষ্ঠী। এবং এই ইতিহাস জীবিত থাকলে এই ইতিহাসের উপর ভর করে আওয়ামী লীগ আবার জীবিত হবে।

১.
৭১-এর মুক্তিযুদ্ধকেই বাংলাদেশের একমাত্র জন্মপ্রক্রিয়া মনে করা
২.
মুজিবকে এই জন্মপ্রক্রিয়ার একমাত্র জনক বানানো
৩.
সেই জনকের দল হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র এজেন্ট হিসেবে, লিগ্যাসির একমাত্র বাহক হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করা।

এই ৩টা পয়েন্টকে ভাঙতে না পারেন তবে, লিখে রাখেন লীগ আবার ফেরত আসবে। বিএনপি পারেনি ভাঙতে। ইতিহাসের ক্ষেত্রে তারা আওয়ামী বাম বয়ানেই সুর মিলিয়েছে। বিএনপির মত ভুল এবার করা যাবে না।

[১]

৭১-ই বাংলাদেশের একমাত্র জন্মপ্রক্রিয়া না। কয়েকটি ধাপে আজকের বাংলাদেশ আমরা পেয়েছি।

ক) শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহের সালতানাত-ই-বাঙ্গালাহ (United Bengal) গঠন
খ) বারোভূঁইয়াদের এন্টিমোঘল রেজিস্ট্যান্স
গ) ১৮৫৭ সালের স্বাধীনতা সংগ্রাম
ঘ)১৯০৫ সালে বঙ্গঙঙ্গ
ঙ) ১৯৪৭ সালে পূর্বপাকিস্তান গঠন
চ) ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ
ছ) ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থান

কেবল ৭১-এর অতিগ্লোরিফিকেশন অতি মহিমান্বিতকরণ আবার একটা লীগী দানবের জন্ম দেবে। এটাই প্রাণভোমরা।

আমার একটা প্রস্তাব আছে। এরপর দেখেন যা ভাল মনে করেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় নামে একটা মন্ত্রণালয় আছে, যার কাজই আওয়ামী বাকশালী ন্যারেটিভকে সার্ভ করা। এই কাজের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় করে অতিগ্লোরিফাই করার কোন দরকার নেই। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনেই একটা বিভাগ হিসেবে এই কার্যক্রম চলতে পারে।

আর যদি থাকেও, তবে শুধু ৭১-কেন্দ্রিক থাকবে না। ২৪-এর শহীদ, আহত, ক্ষতিগ্রস্ত সকলের স্বীকৃতি, তালিকা, পুনর্বাসনও এই মন্ত্রণালয়ের অধীনে আনা হোক। সত্যিকার অর্থেই ২৪ একটা মুক্তিসংগ্রাম।

সেই সাথে আমাদের অতীত সকল সংগ্রামের নিদর্শনের সুরক্ষা, সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণ ও নিশ্চিতকরণ এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব হওয়া উচিত।

[২]

ঠিক যেমন ৭১-ই একমাত্র স্বাধীনতা সংগ্রাম নয়, একইভাবে মুজিবও একমাত্র নায়ক নয়। এমনকি শুধু একাত্তরেরও একমাত্র নায়ক মুজিব নয়। অনেকগুলা নায়ককে আমাদের স্বীকৃতি দিতে হবে।

মুজিবের ঐতিহাসিক খলনায়কত্ব সামনে আনতে হবে। শেরেবাংলা, ভাসানী, মুজিব, চারনেতা, ওসমানী, জিয়াউর রহমান সবাই সমান নায়ক। মুজিব কোনো আহামরি বেশি নায়ক না।

অনেকে ফাউন্ডিং ফাদার আনার কথা বলছেন। সেই আবার ১নংটাই অতিমহিমা পেয়ে গেল। আমাদের জাতীয় স্বাতন্ত্র্যের ইতিহাস তো আরও পুরনো। এদের ফাউন্ডিং ফাদার বললে শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহকে কেন বলছেন না। সেও তো এই মাটিরই সন্তান, জন্ম ও বিবাহসূত্রে বাংলাদেশী। কেন ঈশা খান হবেন না? তিনি জন্মসূত্রে বাংলাদেশী। সুতরাং এটা সমাধান নয়।

সমাধান হল, আমাদের সকল স্বাধীনতা সংগ্রামকে একাকার করে ফেলা। আলাদা করে কোনোটাকে মাথায় না তোলা।

[১] আর [২] কে জয়বাংলা করে দিতে পারলে [৩] অটো-জয়বাংলা হয়ে যাবে।