ইসলামের জন্য আমাদের পূর্বপুরুষদের অবদান স্মরণ করা আসাবিয়াত না। কোন গোত্র দীনের জন্য কেমন অবদান রেখেছে, এটা পরবর্তীদের জন্য উদাহরণ ও বুকে সাহসের খোরাক।
আপনাদের প্রত্যেকের পূর্বপুরুষ হয় আরব (নেয়াখালি, চট্টগ্রাম, সিলেট, উত্তরবঙ্গের নদী তীরবর্তী), নয় তুর্কীয়-ইরানী-আফগান,
(ইসলামের সেনা হিসেবে এসেছে), নয়তো ভূমিপুত্র ফরায়েজী (মধ্য ও দক্ষিণবঙ্গ), ভূমিপুত্র হেদায়েতী (নদীয়া-দক্ষিণবঙ্গ), ভূমিপুত্র মুহাম্মদী (বালাকোটী)। আল্লাহ আমাদের মু'মিন মুজাহিদ পূর্বপুরুষদের জান্নাত নসিব করুন। জান্নাতে সবুজ চা খেতে খেতে তাদের মুখে শুনব তাদের বীরত্বের গল্প ইনশাআল্লাহ। আর নিজেরাও শপথ নিই, আমাদের বাপদাদারা দীনের জন্য আপনা খুন বইয়েছেন। আমরাও তাঁদের আওলাদ হিসেবে তাঁদের মান রক্ষা করব ইনশাআল্লাহ। আল্লাহর দীনের জন্য জান বাজি রাখব একদিন।
আজ আমার পূর্বপুরুষের গল্প শোনাই আপনাদের। আমার বংশকে তুচ্ছার্থে 'নিকেরি বংশ' বলা হয়। এদের পৈতৃক পেশা 'মাছব্যবসা'। ব্যবসায়ী বলে এদের পদবি 'মিঞা'। নিজেদের 'মিঞাবংশ', নিজের এলাকাকে 'মিঞাপাড়া' /ব্যাপারিপাড়া ডেকে থাকে। অন্যান্য পেশার মানুষ লোক এদেরকে ছোটোজাত মনে করে, পারতপক্ষে মেয়ে বিয়ে দেয় না। সাধারণত আমরা নিজেদের কওমের মাঝে বিবাহশাদী করি। কুষ্টিয়া, মাগুরা, ফরিদপুর, ঝিনাইদহ থেকে টাঙ্গাইলেও আমি এই 'নিকেরি' বংশের লোক পেয়েছি।
কারা এরা?
মুসলিম জনগোষ্ঠির মধ্যে যারা মাছ ধরার চেয়ে কেনা-বেচায় অধিক সংশ্লিষ্ট তারা নিকারি নামে পরিচিত। যশোর, ঝিনাইদহ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ অঞ্চলে অধিকাংশ নিকারির বাস। [বাংলাপিডিয়া]


• কেরী সাহেব বলছেন, নিকিরি হচ্ছে মুসলমানদের মধ্যে যারা মাছ বেচে খায়।
• জ্ঞানেন্দ্রমোহন বলছেন- মুসলমান মৎস্য-ব্যবসায়ী; কাবারি।
• হরিচরণ বলছেন- মৎস্যবিক্রেতা জাতিবিশেষ; মুসলমান বলেননি।
• ওদুদ বলছেন- মুসলমান মৎস্য-ব্যবসায়ী সম্প্রদায়।
• আশুতোষ বলছেন- মৎস্যজীবী মুসলমান সম্প্রদায়।
• আঞ্চলিক বলছে- নিক্রে মানে মুসলমান জেলে। ছোটখাট বাকি সব অভিধান এদেরকেই টুকে বলছে মুসলমান জেলে। [ইউসুফ খান]
এই কওমের লোকেরা মূলত এসেছে দক্ষিণ ভারত (কেরালা) থেকে। এরা ছিল উপমহাদেশের প্রথম মুসলমান, মোপলা মুসলমান। ইউসুফখান লেখেন:
"সুদূর অতীতে মাছের খোঁজে এরা বাংলায় আসে, এসে বাংলার জোলে শোলে মাছের খিরখিট্টি দেখে মাছ কাটা, মাছ বেচার কাজে লেগে যায় এবং বাংলায় থেকে যায়। এরাই সেই নিকারি মুসলমান। এই কারণেই টাঙ্গাইলের লোকেরা মালয়ালী মোপলাদেরকে নিকারি বলে।
কিন্তু মুসলমানের নিকারি হওয়া খুব ছ্যা ছ্যা ব্যাপার। সেজন্য এই নিকারিদের সঙ্গে লোকাল মুসলমানরা মিশত না। মালাবারের মোপলারা মারকুটে ছিল। পর্তুগিজ হার্মাদদের এরাই ঠেঙিয়ে সোজা করে দিয়েছিল তাই অদূর অতীতেও বাংলার হার্মাদদের ঠ্যাঙাতে এদেরকে ডাকা হয়েছিল। এরাও বাংলায় থেকে যায়।
নিকারি মুসলমানরা মাছের হোলসেল বিজনেসটা ভালো ধরে। এরা নৌকোয় দক্ষ বলে মাছ আর শুকটির চালানির ব্যবসাটা এরাই শুরু করে।"

সাধারণভাবে, নিকারিদের পেশা জেলেদের কাছ থেকে স্বল্প মূল্যে মাছ কিনে তুলনামূলকভাবে উচ্চদামে পাইকারি বিক্রি করা। একাজে নিকারিরা লাভবান হতো, কিন্তু জেলেরা ঠকে যেত। এজন্য বাংলায় সৃষ্টি হয় কিছু প্রবচন:
নিকারির বউয়ের লাল শাড়ি, জাইল্যার নাই ঘরবাড়ি।
নিকারি-বেটির কী বাহার, জাইল্যা-বেটির হাহাকার।
নিকারির কানে সোনা জাইল্যার পরনে ত্যানা।

ইসলামের জন্য আমার পূর্বপুরুষের অবদান সামনের দিনগুলোতে আমাকে আরও উজ্জীবিত করলো।