মুসলিমদের উপর খুব বড় বড় দুইটা ধাক্কা গিয়েছে গত ১৪০০ বছরে। এত বড় ও দীর্ঘমেয়াদী ধাক্কা, যে তা ইসলামচিন্তাকেও প্রভাবিত করেছে। হীনম্মন্যতা তৈরি করেছে উম্মতের ভিতর। ১ম টা ছিল তাতার/মোঙ্গলদের আক্রমণ। উম্মাহর বিপুল ইন্টেলেকচুয়াল সম্পদ ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসলামচর্চার প্রাণকেন্দ্রগুলো দখল করে গণহত্যা চালিয়েছে, বইপত্র পুড়িয়েছে। তবুও মোঙ্গল-দখলের বাইরে উত্তর আফ্রিকা ও আন্দালুসে ইসলামচর্চা হয়েছে আদিরূপেই।
দ্বিতীয় ধাক্কা ছিল আরও ব্যাপক। যার কবল থেকে কোনো কেন্দ্রই রক্ষা পায়নি। ইউরোপীয় আক্রমণ। মুসলিমদের কোনো কেন্দ্রই উপনিবেশ বা উপনিবেশ-প্রভাব থেকে রক্ষা পায়নি। নজদিবাদও রিপ্লেস হয়েছে মাদখালিজম দিয়ে। একমাত্র দেওবন্দ আন্দোলন দীর্ঘদিন টিকে থাকার পর নতুন প্রজন্মের কিছু দেওবন্দী দাবিদারও অনেক বিষয়ে ছাড় দিয়ে চিন্তা করছে বলে মনে হচ্ছে।
এটাই যেকোন চিন্তার স্বাভাবিক পরিণতি। কিন্তু ইসলাম তো চিন্তামাত্র নয়। ইসলাম হল দীন। এই দীন হেফাজতের দায়িত্ব খোদ আল্লাহর। এজন্য আল্লাহ যুগে যুগে মুজাদ্দিদ পাঠান। মুজাদ্দিদরা ভেসে যাওয়া উম্মাহকে আবার ১ম শতকের মেজাজে ফেরত নেন।
আমাদের খুঁজতে হবে মুসলিমদেরকে কারা আধুনিকতার ডাক দেয়, কাটছাঁট হেকমতি ইসলামের দিকে ডাকে। যে ইসলাম বানাতে চেয়েছিল কলোনাইজাররা আলীগড়কে সামনে এনে ওয়াহাবী আন্দোলনের বিপরীতে। (আলীগড়ের স্বতন্ত্র অর্জনকে স্বীকার করেও)। আর কারা হীনম্মন্যতা ছাড়া ১ম শতকের ইসলামের বুঝ ও মেজাজের দিকে ডাকে। ইসলাম প্রশ্নে ছাড় নয়। হারামের দ্বারা দীন জিন্দা হয় না। হারামের দ্বারা ইকামতে দীন হয় না। ব্যক্তিগত দীন, আত্মশুদ্ধি, আখলাক, মুসলিম চিহ্নকে ফালতু সাব্যস্ত করে জায়োনিস্টদের মত রুহানিয়াতশূন্য জাতীয়তাবাদ করে শুধু ক্ষমতা দখল ইসলামের লক্ষ্য না।
এ অঞ্চলটা সকল মুসলিম ভূখণ্ড থেকে আলাদা। মানচিত্র দেখেন। পুরো মুসলিম দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন, 'প্রবল ইসলামের' সাথে পরিচয়হীন, সুফিদের কোমল ইসলামের দ্বারা ইসলামের প্রসার, গোত্রব্যবস্থাহীন, যোদ্ধাবৃত্তি না থাকা। এ অঞ্চলে ইসলাম অস্ত্রের দ্বারা ঢোকেনি। যারা অস্ত্রের ডাক বিশ্বের অন্যান্য এলাকার জন্য দেন, তাদের মতেও এ এলাকা অস্ত্রের না। এ এলাকা মগজের, এ এলাকার যুদ্ধটা আত্মপরিচয়ের। আত্মপরিচয় বিসর্জন দিয়ে এ এলাকায় দাওয়াহও হবে না, রাজনীতিও হবে না।
ইসলামি সকল ঘরানার প্রতি আরজ, আসুন এ এলাকায় মূল লড়াইটা বুঝি। ইসলামী ইলম, ইসলামী চিহ্ন, ইসলামী মেজাজ সবকিছুর ব্যাপারে প্রান্তিক হই, আপোষহীন হই। মানুষের জন্য সহজ দুই প্রান্তিকের মাঝে একটা চুজ করা। আপনি যদি কিছু কেটেছেঁটে মাঝখানে দাঁড়ান, যদি ভাবেন এভাবে গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে, তাহলে এ অঞ্চলের জন্য এটা ভুল। এতে মানুষের জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া কঠিন হয়। এটা অতীতেও বার বার প্রমাণিত।
ইসলামী সকল ঘরানাকে ইসলামের ব্যাপারে প্রান্তিক হতে হবে। ইসলামের ১ম শতকের বা ন্যূনতম কলোনি-পূর্ব মেজাজকে ধারণ, প্রচার ও প্রমোট করতে হবে। তাহলে ইসলামপ্রিয় আবেগী জনগণের ম্যান্ডেট আসবে। মাঝামাঝি থাকলে না এটা আসবে, না আল্লাহর রহমত। এজন্য আপনারা পরিস্থিতিতে পরিস্থিতিতে নিজের বোধবিচার প্রয়োগ না করে আরও স্পষ্টভাবে কলোনির সাথে যুদ্ধরত আকাবিরদের বুঝকে আঁকড়ে ধরুন।
জনগণের জন্য সিদ্ধান্ত নেয়াকে সহজ করুন। মনের ভিতর কী আছে জনগণ বোঝে না। বাইরের চিহ্ন দেখে ইসলামের পক্ষ-বিপক্ষ শনাক্ত করে। বাহ্যিক ইসলাম, আত্মশুদ্ধি, আখলাকই আমাদের সবচে বড় রাজনীতি। অন্তত এই এলাকায়।
পপুলিজমের (জনপ্রিয়তা) রাজনীতির নামে কাঁড়ি কাঁড়ি ফেমিনিস্ট আর মডার্নিস্ট দীনবিকৃতকারী তৈরি করে জনগণের মন পাওয়া যাবে না। রাজনীতিটাই যেহেতু ইসলাম, অতএব ইসলামকেই পুরোপুরি আঁকড়ে ধরুন। সিম্বোলিজম মানুষের মনে কী প্রভাব ফেলে, তা স্টাডি করে কর্মপন্থা ঠিক করুন।
বিঃদ্রঃ আখলাকের সেক্যুলার ব্যাখ্যা হয়। ঘুষ না খাওয়া, দুর্নীতি না করার সেক্যুলার ব্যাখ্যা হয়। ভালোমানুষির সেক্যুলার ব্যাখ্যা হয়। কিন্তু ইসলামী চিহ্নের সেক্যুলার ব্যাখ্যা হয় না। ইসলামের চিহ্নগুলো রাজনীতির (to gain power) কতবড় হাতিয়ার এটা বুঝতে ইসলামপন্থার আর কত যুগ লাগবে?